Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বোরোর ফলনের ধারণা বদলে দিয়েছে ব্রি উদ্ভাবিত নতুন জাত ব্রি ধান৮৯, ব্রি ধান৯২, ব্রি ধান৯৬, বঙ্গবন্ধু ধান১০০ ও ব্রি ধান১০২

বোরোর ফলনের ধারণা বদলে দিয়েছে
ব্রি উদ্ভাবিত নতুন জাত ব্রি ধান৮৯, ব্রি ধান৯২, ব্রি ধান৯৬, বঙ্গবন্ধু ধান১০০ ও ব্রি ধান১০২
কৃষিবিদ এম. আব্দুল মোমিন
ধান উৎপাদনে সর্বাধিক উৎপাদনশীল মৌসুম বোরো। এ কথা অনস্বীকার্য বোরোর ওপর ভিত্তি করেই দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি রচিত হয়েছে। কেননা দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় ৫৮ ভাগ আসে এ মৌসুম থেকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলমান ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৯ লাখ ৭৬ হেক্টর আর আবাদ হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে। এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ কোটি ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল। মাঠে কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্ত ব্লাস্ট আক্রমণ ছাড়া কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি কম হওয়ায় এবার বোরো ধানের ফলনের অবস্থা বেশ ভালো ছিল, হাওরের ধানও নির্বিঘেœ শতভাগ কৃষকের ঘরে উঠেছে। ফলে আশা করা হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বোরোর উৎপাদন ১০ লাখ টন বেশি হবে। শুধুমাত্র হাওরভুক্ত ৭টি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওরে এ বছর বোরো আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে। আর এই ৭টি জেলায় হাওর ও হাওরের বাইরে উচুঁ জমি মিলে মোট বোরো আবাদ হয়েছে ৯ লাখ ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে যেখান থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৪০ লাখ টন চাল। কিন্তু ধান কাটার পর বিঘাপ্রতি গড় উৎপাদনের ধারা দেখে সবাই বলছেন এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বোরোর উৎপাদন।
এতদিন ধরে বোরোর সেরা জাত ছিল ব্রি উদ্ভাবিত ব্রি ধান২৮ ও ব্রি ধান২৯। ১৯৯৪ সালে উদ্ভাবিত এই দুটি বোরো জাত দেশের মোট বোরো এলাকার প্রায় ৭০ ভাগ দখল করে ছিল। অনেক বিকল্প জাত উদ্ভাবিত হলেও দীর্ঘদিন ধরে বোরো আবাদে কৃষকদের বড় একটি অংশের কাছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জাত ছিল ব্রি ধান২৮ ও ব্রি ধান২৯। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আবাদ হওয়া এই জাত দুটোর রোগবালাই সহনশীলতা ক্রমে হ্রাস পাওয়ায় স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা এ জাত দুটি আবাদে নিরুৎসাহিত করে আসছিলেন। পাশাপাশি ব্রি উদ্ভাবিত বিকল্প জাত ব্রি ধান ৮৮, ব্রি ধান৮৯, ব্রি ধান ৯২, ব্রি ধান ৯৬ বঙ্গবন্ধু ধান১০০ ও ব্রি ধান১০২সহ কয়েকটি জাত চাষ করার পরামর্শ  দিয়ে আসছিলেন। রোগবালাই সহনশীল ও উচ্চফলনের কারণে ২০১৮ থেকে ২০২০ সালে উদ্ভাবিত এ জাতগুলোর প্রতি    কৃষকের আস্থা ক্রমশ বেড়েছে। এবার মাঠে কৃষকের মাঝে ভালো সাড়া ফেলেছে এ ৫টি বোরোর জাত। কৃষকরা বলছে এই জাতগুলোর ফলন আশাতীত ও অভাবনীয়।
কৃষকের বোরোর ফলনের ধারণা বদলে দিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত নতুন এসব জাত। এবার এলাকাভেদে নতুন জাতগুলোর গড় ফলন ছিল বিঘাপ্রতি ২৮-৩৩ মণ। কোথাও কোথাও তার বেশি ফলনের রেকর্ড রয়েছে। এতদিনের আকাক্সিক্ষত সেই বিকল্প জাত এখন কৃষকের হাতে হাতে।
গত ৩০ এপ্রিল ২০২৩ কৃষি সচিব জনাব ওয়াহিদা আক্তার ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তর সংস্থার প্রতিনিধি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কুশলী ইউনিয়নের রামচন্দ্রর গ্রামে দুটি স্থানে মাঠ দিবস ও ফসল কর্তন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। উপজেলায় ৪৮ জন কৃষকের ১৫০ বিঘা যৌথ জমিতে ‘সমলয়’ পদ্ধতিতে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়েছে। যৌথ চাষাবাদের কৃষক দুলহাস শেখ জানালেন “আগে আমাদের এখানে ৩৩ শতাংশের বিঘায় যেখানে ১৮ থেকে ২০ মণ ধান পাওয়া যেত এখন সেখানে আমাদের ধান গবেষণা উদ্ভাবিত ধান (ব্রি ধান৮৯, ব্রি ধান৯২, ব্রি ধান৯৯ এবং বঙ্গবন্ধু ধান১০০) চাষ করে বিঘায় ৩৩ মনেরও বেশি ধান ফলন হচ্ছে এবং যার ফলে আমি ও আমার প্রতিবেশী কৃষকরা খুশি। একটা সময় ধান চাষে পরিশ্রম বেশি হওয়ায় ধান চাষে কৃষকের অনীহা দেখা যেত কিন্তু এখন সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ ও প্রণোদনা সহায়তার কারণে কৃষক পতিত জমিতে ধান চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছে। নতুন জাতের ধানের ফলন ভালো হওয়ায় বেশ লাভবান হচ্ছে।” অনুরূপভাবে টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ডুমরিয়া গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দিন বলেন, “ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধু ধান১০০ ধান বীজ ও সার বিনামূল্যে পাই। দারুণ ফলন পেয়েছি। বিঘায় প্রায় ৩০মণ। এই জাতের ধানে রোগবালাই নেই। ভবিষ্যতে আমি এই ধানের চাষ আরো বাড়াবো।”
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জ জেলার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে বঙ্গবন্ধু ধান১০০ চাষ হয়েছে। এরমধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ২৬ হেক্টর, মুকসুদপুরে ৩৫ হেক্টর, কাশিয়ানীতে ১৮ হেক্টর, কোটালীপাড়ায় ১৯০ হেক্টর ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ১৯৬ হেক্টরে নতুন এই ধানের চাষ হয়েছে। কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, “কোটালীপাড়া উপজেলায় বঙ্গবন্ধু ধান১০০ কাটা শুরু হয়েছে। আমরা নমুনা ফসল কর্তন করে দেখেছি প্রতি হেক্টরে এই ধানের ফলন হয়েছে সাড়ে ৭ টন। জিংক সমৃদ্ধ এই ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকেরা এই জাতের ধানের চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।”
অনুরূপভাবে প্রায় ৫০ একর জমিতে বঙ্গবন্ধু ধান১০০ আবাদকারী দিনাজপুরের বিরল উপজেলার রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত  কৃষক মতিউর রহমান জানান, অন্যান্য ধানের তুলনায় এ ধানের ফলন ভালো। পাশাপাশি এ ধানের রোগবালাই ও পোকামাকড় আক্রমণ রোধ করার ক্ষমতা থাকায় উৎপাদন খরচও কম হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতি একর জমিতে এ ধানের ফলন হয়েছে ৮৫ মণ, যা অন্যান্য ধানের তুলনায় বেশি। কম সময়ে ভালো ফলন ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এ ধান আবাদে উৎসাহিত হচ্ছেন অন্য কৃষকরাও। ইতোমধ্যেই তার কাছে বীজ চাইতে আসছেন অনেক কৃষক।
কালীগঞ্জ উপজেলার ধনপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা আলতাফ হোসেন প্রবাসে থাকতেন। তিনি জানালেন, ‘ধানের নতুন জাত ব্রি ধান৯২ চাষ করে প্রতি বিঘায় ফলন পেয়েছি ৩৩ মণ, যা কল্পনাতীত। এ জাতের ধান চাষে পানি কম লাগে, কীটনাশক লাগে না বললেই চলে। তিনি বলেন, ‘আগে বিদেশে ছিলাম। কৃষিকাজ করতে আগ্রহ বোধ করতাম না। ভাবতাম কৃষির চেয়ে প্রবাসে চাকরিই লাভজনক। কিন্তু ব্রি ধানের নতুন জাত আমার ধারণা বদলে দিয়েছে। আর বিদেশ নয়; দেশেই কৃষিকাজ করব।’
বরেন্দ্রখ্যাত রাজশাহী অঞ্চলে বিঘাপ্রতি সাড়ে ২৮ মণ ফলন দিয়েছে ব্রি ধান৯২। লাভজনক হওয়ায় খরা সহিষ্ণু ও পানি সাশ্রয়ী এই জাতের ধান জনপ্রিয়তা পেয়েছে এ অঞ্চলে।  চলতি বোরো মৌসুমে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ধোকড়াকুল এলাকায় ১১০ বিঘা জমিতে চাষ হয়েছে উচ্চফলনশীল এই ধান। আর এই উদ্যোগে সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) রাজশাহী আঞ্চলিক অফিস।  
বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের চরগাছিয়া গ্রামের একটি মাঠে ২০০ বিঘা জমি এবার প্রথমবারের মতো বোরো চাষের আওতায় এসেছে, আগের বছরগুলোতে এই সময়ে জমিগুলো পতিত থাকত। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্যোগে এবং উপকূলীয় শস্য নিবিড়করণ কর্মসূচি’র আওতায় ওই ২০০ বিঘা (২৭ হেক্টর) জমিতে ব্রি ধান৬৭, ব্রি ধান৭৪, ব্রি ধান৮৯, ব্রি ধান৯২, ব্রি ধান৯৭ ও ব্রি ধান৯৯ জাতের ধান চাষ করা হয়। ৩০০ জন কৃষককে বীজ, সেচ, সারসহ সকল উপকরণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। ফলে এ বছর মাঠজুড়ে চাষ করা হয়েছে ব্রি ধান৬৭, ব্রি ধান৭৪, ব্রি ধান৮৯, ব্রি ধান৯২, ব্রি ধান৯৯ ও বঙ্গবন্ধু ধান ১০০। নমুনা শস্য কাটায় রেকর্ড ফলন পাওয়া যায়। যেখানে প্রতি বিঘাতে ব্রি ধান৮৯ এর ফলন হয়েছে ৩৭ মণ এবং ব্রি ধান৯২ হয়েছে বিঘায় ৩৩ মণ। এছাড়া ব্রি ধান৬৭, ব্রি ধান৭৪ ও ব্রি ধান৯৯ হয়েছে প্রতি বিঘায় ২৮ মণ করে।
১৭ মে ২০২৩ মাননীয় কৃষিমন্ত্রীর স্মৃতিবিজড়িত টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্ধি-কামারপাড়া গ্রামে ব্রি ধান৯২ ও ব্রি ধান১০২ এর ফসল কর্তন ও কৃষক সমাবেশে সরিষা অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দুই ফসলি শস্যবিন্যাসকে তিন ফসলি শস্যবিন্যাসে রূপান্তর প্রদর্শনীর ফসল কর্তন ও কৃষক সমাবেশে স্থানীয় কৃষক প্রতিনিধি সোহরাব উদ্দিন জানান, তিনি আগে যে জমিতে দুই ফসল করতেন ব্রির বিজ্ঞানীদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় এখন আমনের পর সরিষা তারপর বোরো আবাদ করছেন। নতুন উদ্ভাবিত ব্রি ধান৯২ জাতের ধানের আবাদে ধান পাওয়া যাচ্ছে হেক্টরে সাড়ে ৯ টন। আর ব্রি ধান১০২ এর গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৮.৬টন। তাছাড়া এ ধানে জিংকের পরিমাণ প্রতি কেজিতে ২৫ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম।
অনুরূপভাবে স্থানীয় কৃষক আনসার আলী বলেন, এবার মুশুদ্ধিতে ব্রির নতুন জাতের ধান ব্রি ধান৯২ চাষ করে তিনি ৩০ শতকের বিঘায় ফলন পেয়েছেন ৩৪ মণ এবং ব্রি ধান১০২ এর ফলন পেয়েছেন ৩২ মণ। বাড়তি হিসেবে আমনের পরে বারি সরিষা-১৪ আবাদ করে বিঘায় প্রায় ৬ মণ করে সরিষা পেয়েছেন যার বাজার মূল্য ২৪০০০ টাকা।
পরিশেষে, প্রতি বছর আমাদের দেশের জনসংখ্যার সাথে  ২০-২২ লক্ষ নতুন মুখ যোগ হচ্ছে। ১৭ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে খাবারের জোগান দিতে হলে অবশ্যই ব্রি উদ্ভাবিত নতুন জাতের উচ্চফলনশীল ধানগুলো চাষ করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। কেননা নতুন জাতগুলো ফলন আগের পুরনো জাত ব্রি ধান২৮ ও ব্রি ধান২৯ এর তুলনায় অনেক বেশি। সুতরাং এখন পুরনো জাতগুলো বাদ দিয়ে নতুন জাতের ধান ব্রি ধান৮৯, ব্রি ধান৯২, বঙ্গবন্ধু ধান১০০ এবং ব্রি ধান১০২ চাষ করতে হবে। উপরন্তু বঙ্গবন্ধু ধান১০০ এবং ব্রি ধান১০২ চিকন, উচ্চ  জিংকসমৃদ্ধ, জিরা টাইপের যা আমাদের পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করবে।

লেখক: ঊর্ধ্বতন যোগাযোগ কর্মকর্তা, ব্রি, গাজীপুর, ঢাকা। মোবাইল : ১৭১৬-৫৪০৩৮০, মেইল :smmomin80@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon